
"আমাকে ঘন্টার পর ঘন্টা একটা রুমের ভেতর আটকে রেখে সাপের মত পেটানো হয়েছিলো"
আমি বাংলাদেশে আমার জন্মপরিচয়কে কখনো মুছে ফেলতে পারবো না। আমি এদেশকে ভালোবাসি। আমার গল্পটা এখান থেকেই শুরু।
আমি দক্ষিন এশিয়ার এক সুন্দর দেশে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়েছি সর্বোচ্চ রেজাল্ট নিয়ে। ভর্তি হয়েছি দেশের সর্বোচ্চ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বুয়েটে। কিন্তু এরপর আমার ভাগ্য আর সরলরৈখিক থাকেনি।
“আমাকে এদেশের সর্বোচ্চ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা অর্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। এবং এরপর আমাকে ঘন্টার পর ঘন্টা একটা রুমের ভেতর আটকে রেখে সাপের মত পেটানো হয়েছিলো। নির্যাতনে আমার নিশ্বাস যখন ভারী হয়ে গিয়েছিলো, তখন একটা মোটা কম্বল দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরা হয়েছিলো। একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য ছট ফট করছিলাম। আমার তখন গ্রামে আমার মায়ের কথা মনে পড়ছিলো। মনে পড়ছিলো আমার কৃষক বড় ভাইয়ের কথা। স্মৃতিপটে বোনগুলোর মুখ ভেসে উঠছিলো। আহ! মনে হচ্ছিলো, আমি কি আর বেঁচে ফিরতে পারবো!”
যখন ছোট ছিলাম, স্বল্প আয়ের পরিবার ছিলো আমাদের। বাংলাদেশের একেবারে উত্তরে যে দিনাজপুর জেলা, সেখানে আমি জন্মেছিলাম। বিরাট বিস্তীর্ণ মাঠ আর নদী পুকুর ঘিরে শৈশব ছিলো আমাদের। আমাদের ছিলো অনেক ভাই-বোন। সবাই ততটা লেখাপড়াও করে নি। কিন্তু অসাধারণ পারিবারিক আবহে এক শান্তির জীবন ছিলো আমাদের। আমাদের মা ছিলেন সেই জীবনের উচ্ছ্বলতা। আমাদের বাবা ছিলেন সেই জীবনের ছায়া।
আমি জানতাম না, নিম্ন আয়ের একটি পরিবারের ছেলেকে এই পারিবারিক গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পার হবার পথে কত কীটপতঙ্গ আর সরীসৃপ দেখতে হবে। এই যাত্রায় আমার পরিবারের কারোরই পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলো না। আমার পরিবার দেখেছিলো এক সুন্দর স্বপ্ন এবং আমার প্রতি তাদের ছিলো পাহাড়সম প্রত্যাশা।
উচ্চ মাধ্যমিকের পরই আমার পরিচিত গ্রাম ছেড়ে রাজধানীতে চলে আসি। যে গ্রামে আমার বন্ধুরা ছিলো, যে গ্রামে আমার শৈশব ছিলো, এক বিরাট স্বপ্নকে পূঁজি করে সেই গ্রাম থেকে এসে পা রাখি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটে; হাজার মেধাবীর স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হই।
“আমাকে এক অন্ধকার রুমে নিয়ে একটা চেয়ারে বসানো হয়েছিলো। তাদের নেতা ছিলো সিভিল ০৭ ব্যাচের তন্ময় আহমেদ। সে আমাকে লোহার পাইপ দিয়ে পেটাতে শুরু করে। আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছিলো। আমি যখন পানি পানি বলে চিৎকার করছিলাম, তখন একজন এসে আমার ফেসবুক আইডি চাইলো। আমি বললাম, “আমি সব দিবো, আমাকে পানি দেন। আমি মারা যাচ্ছি।” কিন্তু তারা আমাকে আবার পেটানো শুরু করেছিলো। এবার বেশ কয়েকজন একত্রে লাথি ঘুষি দিচ্ছিলো। আমি শুধু ‘আল্লাহ আল্লাহ’ বলে চিৎকার করতে থাকি।”
আমি ২০১২ সালে বুয়েট ক্যাম্পাসে এসেছিলাম। অনেক আনন্দ নিয়ে, উচ্ছ্বাস নিয়ে আমি এবং আমার সাথে আরো অনেকে এই প্রতিষ্ঠানের সাথে ভাগ্য জড়িয়ে নিলাম। কিন্তু আমার সাথে আরো যারা এসেছিলো, আমার মতো তাদের অনেকের জন্যই এই ক্যাম্পাস শেষ পর্যন্ত আর সুন্দর থাকেনি।
আমরা আসার কিছুদিন পরেই বুয়েট ক্যাম্পাস আওয়ামীপন্থী ভিসির দূর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে উত্তাল। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের শিক্ষা বাবার কাছেই পেয়েছি। সাধারন ছাত্রদের সাথে তাই আমিও সেখানে ছিলাম। আওয়ামীলীগ সরকার যখন মানবতাবিরোধী আপরাধ ট্রাইবুনালের নামে বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের প্রহসনের বিচার শুরু করে, তখন তার অসঙ্গতি নিয়েও লেখালেখি করি ফেসবুকে। এই সব কারণে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের টার্গেটে পড়ে যাই।
৯ জুন, ২০১৩। লেভেল-১, টার্ম-২ এর ছাত্র তখন আমি। অন্যান্য দিনের মতোই ক্যাম্পাসে যাই। বুয়েটের সাদামাটা কিন্তু গোছানো ক্যাম্পাস। ক্লাস-ল্যাব শেষ করে ক্যাম্পাসের পথ ধরে হাঁটতে ভালোই লাগে আমার। হঠাৎ শুভ্রজ্যোতি টিকাদার (মেকানিকাল’ ০৯) এবং কাজল (সিভিল’ ০৯) নামে ছাত্রলীগের দুই কর্মী আমার হাত চেপে ধরলো।
-আমাদের সঙ্গে তোমাকে যেতে হবে। কথা আছে।’
সামনে একজন পরিচিত শিক্ষককে দেখতে পেলাম।
আমি বললাম, আমার তো স্যারের সাথে একটু কথা আছে।
কী ভেবে সম্মতি দিলো তারা। আমি জানতাম, স্যার আমার জন্য এই মুহূর্তে কিছুই করতে পারবেন না। পেছন থেকে তখনও ওরা দুজন অনুসরণ করছিল আমাকে।
আমি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলাম৷ জুতো খুলে ফেললাম এবং শরীরের সমস্ত শক্তি একত্রিত করে দৌড় শুরু করলাম। ছুটতে ছুটতে গিয়ে দ্রুত একটা রিক্সা নিয়ে নিলাম। এবং ক্যাম্পাস থেকে দ্রুত চলে গেলাম।
ঢাকা তখনও আমার জন্য নতুন শহর। আমি করণীয় ভেবে পাচ্ছিলাম না। বাবা-মা বা পরিবারের কাউকে জানালে তারা আতংকিত হয়ে যেত। কয়েকদিন আর ভার্সিটিতে গেলাম না। অনেক ভেবেচিন্তে শেষ পর্যন্ত ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ড. দেলোয়ার হোসেনকে ঘটনা জানালাম। কিন্তু তিনি আমার নিরাপত্তার জন্য কোন ব্যবস্থা তো নিলেনই না, বরং আমাকেই দোষ দেওয়ার চেষ্টা করলেন। বললেন, ‘এত শিক্ষার্থী থাকতে তোমাকেই কেন ধরতে গেলো?’ আমি হতভম্ভ হয়ে গেলাম।
এর পরেও কয়েকজন বন্ধুর পরামর্শে আমি লিখিত অভিযোগ নিয়ে ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের অফিস কক্ষে হাজির হই। সেখানে গিয়ে দেখি, যারা সেদিন আমাকে ধরতে এসেছিল, তারাই ছাত্রকল্যানের পরিচলকের অফিসে চা-নাস্তা করছে। পরবর্তীতে জেনেছি, উনি ছিলেন কাপুরুষ এবং আওয়ামীলীগের সুবিধাভোগী দালাল শ্রেণীর। বছরের পর বছর বুয়েটে ঘটে যাওয়া আরো অসংখ্য নির্যাতকের প্রশ্রয়দাতা ছিলেন এই শিক্ষক।
আমার মেকানিকাল ড্রয়িং ল্যাবের কুইজ পরীক্ষার তারিখ দিয়ে দিলো। ছাত্রকল্যান পরিচালকের কাছ থেকে কোন সাহায্যের আশা ছিলো না। এক সপ্তাহ পরে, ১৫ জুন, ২০১৩ আবার ক্যাম্পাসে গেলাম। পরীক্ষা শেষ হলো। তখন পড়ন্ত বিকেল। আমি খাতা জমা দিলাম। বের হয়ে আসবো ঠিক তখন শুভ্রজ্যোতি টিকাদার এবং কাজল ক্লাসরুমে ঢুকলো। কাজল আমার হাত এত শক্তকরে ধরলো যেন এক্ষুনি মুচড়ে ভেঙে ফেলবে। আশেপাশে আমার সতীর্থরা অসহায় দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে।
এরমধ্যেই হুড়মুড় করে ছাত্রলীগ নেতা তন্ময় আরো লোকজন নিয়ে পরীক্ষার হলে ঢুকলো। হলে ঢুকেই তারা কয়েকজন আমার কাছে এলো। বাকিরা পরীক্ষা পরিদর্শকের কাছে গেলো। সমস্ত ছাত্র আর পরীক্ষা পরিদর্শকের সামনে থেকে আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো।
বাইরে আরো লোকজনসহ বাইক নিয়ে অপেক্ষা করেছিলো বুয়েট ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আমিনুল হক পলাশ (কেমিকেল’ ০৬)। আমাকে একটা বাইকের মাঝখানে বসিয়ে পেছন থেকে একজন আমাকে জাপটে ধরে থাকে। বাইকের বহর গিয়ে থামলো আহসান উল্লা হলের সামনে। মাগরিবের আজান দিচ্ছিলো তখন। আমাকে হলের তৃতীয় তলায় ৩১৯ নাম্বার রুমে নিয়ে যাওয়া হলো। রুমে ঢুকতেই প্রচন্ড দূর্গন্ধে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো। কেমন যেন স্যাতসেতে অন্ধকার রুম। টর্চার সেল হিসেবে ছাড়া অন্য কোন কাজে ব্যবহার হতো মনে হয় না।
আমাকে একটা চেয়ারে বসানো হলো। তন্ময় এসে আমার ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড চাইলো। আমি দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমার গালে প্রচন্ড জোরে একটা থাপ্পড় দিলো। গালের একটা পাশ অবশ হয়ে এলো। আমার ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলো রাসেল (সিভিল’ ১০) নামের আরেক সন্ত্রাসী (রাসেল পরবর্তীতে আমার সাথে যোগাযোগ করে ও ক্ষমা চায়। তাকে আন্তরিকভাবেই অনুতপ্ত মনে হওয়ায় আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। শুধু ঘটনার প্রামাণিকতার জন্যই তার নাম উল্লেখ করা)। তার হাতে ছিলো লোহার একটা পাইপ। তন্ময়ের থাপ্পড়ের যন্ত্রণা হজম করার আগেই রাসেল তার হাতে থাকা পাইপ দিয়ে সজোরে পিঠে আঘাত করে। প্রতিটি আঘাতে আমি ‘আল্লাহ গো, মাগো’ বলে চিৎকার দিয়ে উঠি। রাত বাড়ছিলো, সাথে সাথে বাড়ছিলো আমার উপর ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের অত্যাচারও। পাইপের আঘাত আর অনবরত কিল ঘুষি চলতেই থাকে।
প্রায় দেড় ঘন্টা অনবরত নির্যাতনের পর আমি মেঝেতে লুটিয়ে পড়ি। ইশ! একটু যদি মায়ের সাথে কথা বলতে পারতাম৷ যদি বাবাকে বলতে পারতাম, ‘বাবা আমাকে ক্ষমা করে দিও, আমি তোমার স্বপ্নের ইঞ্জিনিয়ার হতে পারলাম না।’ কতক্ষণ এভাবে পড়েছিলাম জানি না। মারতে মারতে ওরাও বোধ করি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলো। একটু পরে তন্ময় একটা মোটা কম্বল দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরে। কিছুক্ষণ পরে আমাকে টেনে হেঁচড়ে আবার চেয়ারে বসালো।
আমাকে হলের ভিতরে ঢুকিয়েছিলো সন্ধ্যা ৭ টার দিকে। আনুমানিক রাত ১১ টার দিকে শিক্ষকদের একটা টিম এলো সেই টর্চার সেলের নিচে। আমি রুম থেকে শুনতে পাচ্ছিলাম সেখানে থাকা বুয়েট ছাত্রলীগ আহ্বায়ক পলাশ শিক্ষকদের সাথে উচ্চবাচ্য করছিলো। সে কিছুতেই আমাকে ছাড়বে না। শিক্ষকদের কেউ একজন বললেন, ছেলেটা বেঁচে আছে, এটা নিশ্চিত করো।
আহ! আমি তখনও বেঁচে ছিলাম।
একটা সময় গিয়ে তারা শিক্ষকদের বললো–যদি আমি তাদের ফেসবুক পাসওয়ার্ড দিই, তাহলে আমাকে ছেড়ে দিবে। আমার ফেসবুক আইডি ঘেটে সন্দেহজনক কিছুই পেলো না। কিন্তু ওদের অত্যাচারের পিপাসা তখনো মেটেনি। ছাত্রলীগের টার্চার সেল থেকে ছেড়ে দিলেও পুলিশে কল দিয়ে আমাকে ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছিলো। কিন্তু, সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ আর শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় রাত আনুমানিক একটার দিকে বুয়েটের এম্বুলেন্সে আমাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। যে সব শিক্ষকেরা বাঁচাতে এসেছিলেন তাদের মধ্যে সিরাজুল হক খান, ডঃ সুলতানা রাজিয়া এবং ডঃ নাসিম হাসানের কথা মনে আছে।
সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেও আমি আর কখনো বুয়েট ক্যাম্পাসে ফিরতে পারিনি। ক্লাসে ফেরার জন্য চেষ্টা করেছি অনেকভাবে। শিক্ষকরা কেউ আমার নিরাপত্তার দায়িত্ব নেননি। যারা নির্যাতন করেছে, তাদের কাছে অব্দি ধরণা দিয়েছি। আমার একটাই স্বপ্ন ছিলো–ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাবার স্বপ্ন পূরণ করা।
প্রায় দেড় বছর এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করেছি। কেউই নিরাপত্তার কোন আশ্বাস দিতে পারে নি।
এক পর্যায়ে বাড়িতে সব জানাজানি হবার পর বাড়িতে যাওয়াও বন্ধ করে দেই। বাবাকে দেখলেই আমার কষ্ট হতো। দুবছর আগেও কত স্বাভাবিক জীবন ছিলো এই পরিবারে! আর এখন বাড়ি গেলেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন বাবা।
শেষ পর্যন্ত বুয়েট গ্রাজুয়েট হওয়ার আশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হই। আমি বাইরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ শুরু করি। সৃষ্টিকর্তার করুণায় ২০১৬ সালে মালয়েশিয়া চলে যাই। সেখান থেকে ২০২১ সালে গ্রাজুয়েশন শেষ করে বের হই। বুয়েটে আমার ক্লাসমেটদের অনেকে ততদিনে পিএইচডিও শেষ করে ফেলেছে।
জীবনের এই ঝড়ের মধ্যে আমার থেকে পাঁচটি বছর হারিয়ে যায়। অথচ আমি ছিলাম বাংলাদেশের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র।। আমি এই শহরে এসেছিলাম দেশসেরা প্রকৌশলী হতে। কিন্তু এই দেশ ঘিরে আমার কল্পনা আর বাস্তবের কত বেশি অমিল ছিলো!
আমাকে নির্যাতনের ঘটনায় বুয়েট ছাত্রলীগের অনেকেই জড়িত থাকলেও এদের বেশিরভাগকেই আমি চিনি না। যাদেরকে আমি চিনতে পারি তারা হলো-
১. আমিনুল হক পলাশ (কেমিকাল’ ০৬)
২. তন্ময় আহমেদ (সিভিল’ ০৭)
৩. শুভ্রজ্যোতি টিকাদার (মেকানিকাল’ ০৯)
৪. আরিফুর রহমান কাজল (সিভিল’ ০৯)
৫. শাহাদাৎ হোসেন রাসেল (সিভিল’ ১০)
আমি বলেছিলাম, আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। কিন্তু এই দেশে জন্ম না হলে আমাকে হয়ত এত নিষ্ঠুর ভাগ্যের সম্মূখীন হতে হতো না। তবুও আমি এদেশকে ভালোবাসি। আমি আমার দেশের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। তবে আমার মনে একটা কষ্ট কাজ করে। আমাকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি যে দেশ, তাকে নিরাপদ করার জন্য আমি কিছুই করতে পারছি না। এই অনিরাপদ রাষ্ট্রে আর কোন মাকে যেন সন্তানের নিরাপত্তার জন্য কাঁদতে না হয়- সেই দিন যেনো দেখে যেতে পারি, আল্লাহর কাছে এটাই এখন আমার প্রার্থনা।
এনামুল হক
ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মালয়েশিয়া
কেমিক্যাল- ১১ ব্যাচ, বুয়েট।
ফুটনোট: এনামুলের উপরে নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা ও নির্যাতনের সময়ে অভিযুক্তদের সম্পৃক্ততা ‘সোচ্চার’ এর পক্ষ থেকে যাচাই করা হয়েছে এবং পরবর্তীতে কিছু মিডিয়াতেও প্রকাশিত হয়েছিলো। তবে নির্যাতনে তাদের সুনির্দিষ্ট ভূমিকা এনামুলের জবানবন্দী ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে যাচাই করা হয় নি এবং অভিযুক্তদের মন্তব্য নেওয়ার জন্য সোচ্চারের পক্ষ থেকে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয় নি।
সম্ভাব্য শাস্তি: বাংলাদেশ দন্ডবিধি ৩০৭ ধারা অনুযায়ী অপরাধ প্রমানিত হলে নির্যাতনে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা ৩২৫ ধারা অনুযায়ী সর্বনিম্ন সাত বছরের কারাদন্ড ও জরিমানা হতে পারে। কর্তব্যে অবহেলা এবং নির্যাতনে সহায়তার কারণে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বাংলাদেশ দন্ডবিধি ১১৫, ১১৬ এবং ১১৯ ধারা অনুযায়ী বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা হতে পারে।