
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক নিষ্ঠুরতার এক নীরব সাক্ষী আমি
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক নিষ্ঠুরতার এক নীরব সাক্ষী আমি। আমি আরাফাত। এদেশের নিভৃত গ্রাম থেকে ঢাকাতে পড়তে আসা অসংখ্য ছাত্রদের মতই একজন। আমি বুয়েটে এসেছিলাম ২০১৬ সালে। বস্তু ও ধাতু প্রকৌশলের ছাত্র হিসেবে। আমার জন্ম চাঁপাইনবাবগঞ্জে। বাবা ছিলেন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। এসএসসিতে এবং এইচএসসিতে গোল্ডেন এ+ পেয়ে সারা গ্রামে পরিচিত ছিলাম আমি।
আজ যদি কেউ আমাকে জীবনের একটি ভুলের কথা স্বীকার করতে বলে যেখান থেকে আমাকে ফেরত যাবার সুযোগ দেয়া হবে, তা হচ্ছে রাজনৈতিকভাবে ভীষন কলুষিত বুয়েটে আমার পড়তে আসা। বাংলাদেশের এক সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার খেসারত আমি এবং আমার পরিবার দিয়েছি। আজ এত ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে আমার বর্তমান অবস্থান থেকে আমার কথাগুলি আমি চিৎকার করে সবাইকে জানাতে চাই। তবে আমি চাই না, কারো প্রতি প্রতিহিংসাবশত অতিরিক্ত দোষারোপ করে ফেলি।
২০১৬ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের ক্লাস শুরু হয়। বুয়েট ছিলো আমার আজীবন লালিত স্বপ্ন। আমার বাবা সবসময় চাইতেন আমি ডাক্তার হই। মানুষের জন্য কিছু করি। কিন্তু আমার চাওয়া ছিলো ইঞ্জিনিয়ার হয়ে সভ্যতা নির্মানে অবদান রাখা। আল্লাহর ইচ্ছাও ছিলো তাই। বুয়েটে এসে প্রথম থেকেই খুবই মনোযোগী হবার চেষ্টা করি। ক্লাসের ফলাফলও ভাল করতে থাকি।
অনেক আগে থেকেই র্যাগিং সমস্যা ছিলো বুয়েটের হলগুলোতে। তাই ভয়ে হলে উঠিনি প্রথমে। বাইরে এক আত্মীয়ের সাথে থাকতাম। বুয়েট ক্যাম্পাস আমার ভাল লাগতো। সুযোগ পেলেই বুয়েটের লাইব্রেরিতে গ্রুপ স্টাডি করতে যেতাম। আমার প্রিয় আড্ডার জায়গা ছিলো পলাশির মোড়। মনে হতো জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলি কাটাচ্ছি। বুয়েটের প্রতিটা কোনায় আমার পায়ের ছাপ পড়েছে। এবং সেই বুয়েটে আমার রক্তের ছাপও পড়েছে।
দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রদের র্যাগের ভয় কম থাকায় লেখাপড়ার সুবিধার্থে হলে উঠি। বুয়েটের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ততদিনে নানা কারনে জটিল হয়ে উঠছে। নির্মোহ দৃষ্টিতে দেখতে গেলে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং বুয়েটে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনার পরিক্রমায় বুয়েট ততদিনে প্রায় আগ্নেয়গিরি। ২০১২ সালে ভিসিবিরোধী আন্দোলন, ২০১৩ সালে হেফাজতের শাপলা চত্ত্বর প্রোগ্রাম, সেখানে বুয়েটের একজন ইন্তেকাল করা, সেই প্রোগ্রামের এক ঘটনাকে ঘিরে ছাত্রলীগ নেতা দ্বীপ হত্যা, সব মিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ধীরে ধীরে অকার্যকর অবস্থায় চলে গিয়েছিলো।
রশীদ হলে খুব নিরিবিলি দিন কাটছিলো আমার। নিয়মিত হলের মসজিদে যেতাম। পরিবার ছেড়ে একা থাকা অবস্থায় নামাজে দেখা হওয়া বন্ধুদের সাথে আমার খুব সুন্দর সময় কাঁটতো। মাঝে মাঝে নামাজ শেষে টেবিল টেনিস বা ব্যাডমিন্টন খেলতাম আমরা। চমৎকার কয়েকজন বন্ধু হয়েছিলো আমার।
২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি। সেদিন ছিলো সেকেন্ড ইয়ারের সেকেন্ড সেমিস্টারের শেষ ক্লাস। একটা ল্যাব সেশনালের কুইজ পরীক্ষা ছিলো সেদিন। পরীক্ষা বেশ ভালো হয়েছিলো, সবার আগে পরীক্ষা শেষ করে বের হয়েছিলাম। এদিকে আমি জানতেও পারিনি, আমি অনেকের কাছে শত্রু হয়ে গিয়েছি। কুইজ ছিলো ইসিই (ওয়েস্ট পলাশী) ভবনে। নিচে হঠাৎ ছাত্রলীগের কিছু ছেলে জড়ো হয়ে যায়। একজন বন্ধু এসে জানালো, আমাকেই খোঁজা হচ্ছে। আমি নিচে তাকিয়ে যাদের দেখলাম, তারা অনেকেই ক্যাম্পাসে বখাটে হিসেবে পরিচিত। আমি একটু আড়ালে চলে যাই। একটু পর নিচের ছেলেগুলি দ্রুত সারা বিল্ডিং এ ছড়িয়ে পড়ে এবং আমাকে বিভিন্ন রুমে খুঁজতে শুরু করে।
আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। এক বন্ধুর পরামর্শে আমি বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মনিরুজ্জামান স্যারকে কল দেই। স্যারকে কল দেবার কিছুক্ষন পর ডিপার্টমেন্টের আরেকজন শিক্ষক হুমায়ুন স্যার আমাকে ফোন দিয়ে আমার অবস্থান জানতে চান। আমি তখন ইসিই ভবনের এক কক্ষে লুকিয়ে ছিলাম।
হুমায়ুন স্যার আসার পর আমি একটু সাহস পাই। ততক্ষণে বিকেল গড়িয়ে গেছে। একটু পরে তৎকালীন ছাত্র কল্যাণ পরিচালক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার সেখানে উপস্থিত হন। তিনি আসার পরে ছাত্রলীগের ছেলেরা চলে যায়। ছাত্র কল্যাণ পরিচালককে দেখে হুমায়ুন স্যার আমাকে নিয়ে নীচে নেমে আসেন। সাথে সাথে আবার চারদিক থেকে এসে জড়ো হয় ছাত্রলীগের ২০-২৫ জন ছেলে।
আমি জীবনে কখনো এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি। আমি তখনো ভাবিনি, তারা আমাকে শিক্ষকদের কাছ থেকে পর্যন্ত ছিনিয়ে নিয়ে যাবে। বুয়েট ছাত্রলীগের তৎকালীন সেক্রেটারি রাসেলকে সত্য প্রসাদ মজুমদার জিজ্ঞেস করলেন, কি সমস্যা? রাসেল (পরবর্তীতে আবরার হত্যার মূল আসামী) বললো, স্যার এগুলি ছোট সমস্যা। আমরা মিটিয়ে নেবো। স্যার খুব হালকাভাবে আমাকে বললেন, চলে যাও। কোনো সমস্যা নেই।
হুমায়ুন স্যার সত্য প্রসাদ মজুমদার স্যারকে বারবার অনুরোধ করলেন ছিলেন, তিনি যেন আমাকে তার গাড়িতে করে নিয়ে যান। কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে তিনি তড়িঘড়ি করে গাড়ি নিয়ে চলে যান। পরবর্তীতে আমি বুঝতে পারি, এই সকল ঘটনায় সত্য প্রসাদ মজুমদার খুব ঘনিষ্টভাবে যুক্ত ছিলেন। আমাকে খুঁজে বের করে ওদের হাতে দেওয়ার জন্যই তিনি এসেছিলেন। আমার ঘটনার আগে পরে অনেক ছাত্র একই পরিস্থিতিতে পড়েছে।
হুমায়ুন স্যার আমাকে সাথে নিয়ে পুরাতন ক্যাম্পাসের দিকে রওনা দিলেন। আমরা বেরিয়ে একটা রিকশা নিলাম। আমাদের পেছনে ছাত্রলীগের বহর। আমি তখনো ভাবিনি বেশি কিছু হবে। রিক্সা শেরে বাংলা হলের সামনে এলেই হঠাৎ সামনে চলে আসে ছেলেগুলি। রিকশা থামিয়ে দেয়। স্যারের সাথে ওরা চিৎকার করতে থাকে। স্যার অনেক কষ্ট করে আমাকে নিয়ে আসেন আমাদের ডিপার্টমেন্ট একাডেমিক ভবনের সামনে।
আমার প্রিয় সেই বৃক্ষশোভিত রাস্তাকে খুবই অপরিচিত লাগছিলো। দেখলাম বিভাগীয় প্রধান এবং সিনিয়র কয়েকজন শিক্ষক সেখানে উপস্থিত আছেন। আমাকে রিক্সা থেকে নামিয়ে হুমায়ুন স্যার বিভাগীয় প্রধান মনিরুজ্জামান স্যারের হাতে তুলে দেন। তাদের সামনেই শুরু হয় চিৎকার এবং টানাহেঁচড়া। মনিরুজ্জামান স্যার একপর্যায়ে আমাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। স্যারদের সামনেই ওরা আমাকে মাটিয়ে শুইয়ে ঘুষি লাথি দিতে থাকে। সবার সামনে দিয়ে ওখানে থাকা একটা রিক্সা ভ্যানে উঠিয়ে মুখ চেপে ধরে নিয়ে যায় বুয়েট জিমনেসিয়ামের পেছন দিকে।
খুব খারাপ লাগছিলো, অনুভূতিগুলো ততক্ষণে ভোঁতা হয়ে গেছে। জিমের পেছনে নিয়ে যাওয়ার সময় রশিদ হল ও শেরে বাংলা হল থেকে আমার অনেক বন্ধু এবং অন্যান্য ছাত্ররা আমাকে দেখতে পায়। জিমনেশিয়ামের পেছনে তখন নতুন ছাত্রী হলের কাজ চলছে। ওখানে নিয়ে ছাত্রলীগের ওরা আমাকে আঘাতের পর আঘাত করতে থাকে। জিমনেশিয়ামের ভেতরে যারা ছিলো, আমার চিৎকারে অনেকেই বের হয়ে আসে। কিন্তু কারোই যেন কিছু করার নেই৷ পাশেই রশিদ হল থেকে স্ট্যাম্প-হকিস্টিক নিয়ে আসে ওরা।
নিষ্ঠুরভাবে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে আর বলতে থাকে, তুই শিবির করিস। একটা লিস্ট দেখিয়ে বলে, এই দেখ তোর নাম। তোর বাড়ি রাজশাহী, তুই শিবির করিস। একজন আমাকে স্ট্যাম্প দিয়ে নির্মমভাবে মারতে থাকে আর চিৎকার করতে থাকে। আমি তাকে চিনতে পারি, হাসান সরওয়ার সৈকত (মেকানিকাল ১৫ ব্যাচ)। সে আমাকে জিজ্ঞাসা করে, আমাকে চিনিস?
ওকে আমি ভালো করেই চিনতাম। রাজশাহী নিউ ডিগ্রী কলেজে একসাথে ইন্টারমিডিয়েটে পড়তাম আমরা, তবে কখনো ঘনিষ্ঠতা হয় নি। সৈকত আমাকে প্রচন্ডভাবে মারতে থাকে আর চিৎকার করতে থাকে। রাজশাহীতে তুই শিবিরের মেসে থাকতি না! আমি এতক্ষনে আমাকে নির্যাতনের কারণ বুঝতে পারি।
ওরা কয়েকজন করে পালাক্রমে মারতে থাকে আর আমাকে শিবির করি- এই স্বীকারোক্তি নেওয়ার জন্য পেটাতেই থাকে। আমি একটার পরে একটা স্ট্যাম্প ভাঙছে বুঝতে পারছিলাম।
ওরা আমাকে বুয়েটে শিবিরের কার্যক্রম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে থাকে। ওদের বলার মতো তেমন কিছু ছিলো না। আমি বুঝতে পারি ওরা কথা শোনার মতো অবস্থায় নেই। উন্মাদ হয়ে গেছে মারার জন্য।
আবার এলোপাথাড়ি পেটানো শুরু করে। ওরা দশ মিনিট মারছিলো, আবার পাঁচ মিনিট অপ্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ করছিলো। এরপর আবার মারছিলো। কয়েকজন মারছিলো, তারা হাঁপিয়ে উঠলে আবার অন্য কয়েকজন মারছিলো।
আমি এবার প্রথমবারের মতো জ্ঞান হারাই। পানি ছিটিয়ে ওরা আমার জ্ঞান ফিরায়। কিছুক্ষণ পরে আবার জিজ্ঞাসাবাদের নামে এলোপাথাড়ি পেটানো শুরু করে। এত কিছুর মধ্যেও আমি হাত দুটো দিয়ে আমার মুখ আর মাথাটা বাঁচানোর চেষ্টা করছিলাম । কেউ একজন এসে বলে, আর বেশি সময় পাবি না, কালিমা পড়ে নে। আমি অবশ্য বাঁচার আশা অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছিলাম। আল্লাহকে ডাকছিলাম আর ভাবছিলাম আমাকে এভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে জানার পরে আমার মায়ের কেমন লাগবে?
কিছুক্ষণ পরে পুলিশের একটা ভ্যান এসে আমাকে উঠিয়ে নেয়। আমি আবার জ্ঞান হারাই। জ্ঞান ফেরে ঢাকা মেডিকেলে। আমি চোখে দেখতে পাচ্ছিলাম না। ঘাবড়ে গিয়েছিলাম, চোখ নষ্ট হয়ে গেলো কিনা।
একটা স্ট্রেচারে শুইয়ে ঘন্টাখানেক আমাকে ফেলে রাখে। পুলিশের ফোন দিয়ে আব্বুর সাথে কথা বলি। এরপর আমার এক আত্মীয় এলে পুলিশ আমাকে ওনার জিম্মায় দিয়ে চলে যায়।
আমার বাম হাতটা ভেঙে একদম গুড়িয়ে যায়। এক মাসের বেশি সময় লেগেছিলো শুধু বিছানা থেকে ওঠার মতো শক্তি পেতে। আমার শিক্ষাজীবন ধ্বংস হয়ে যায়। হলের সিট ছেড়ে দেই। বুয়েটের হাসপাতালে বসে পরীক্ষা দিতাম। ক্যাম্পাসে যেতে সবসময়ই একটা ভয় কাজ করতো। কোন রকমে ক্লাস শেষ করেই বাসায় চলে আসতাম। ক্যাম্পাস লাইফ বলতে আর কিছুই ছিলো না।
আমাকে যারা এভাবে নির্যাতন করেছিলো তাদের বিরুদ্ধে বুয়েট প্রশাসন বা রাষ্ট্র কোন ব্যবস্থা নেয় নি। প্রশাসনের আস্কারা পেয়ে তারা অনেকেই এরকম আরো অনেক নির্যাতনের সাথে জড়িত হয়েছে। এদের হাতেই পরবর্তীতে ২০১৯ সালে আবরার ফাহাদ খুন হয়। সত্য প্রসাদ মজুমদার যদি সেদিন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতো, আবরার ফাহাদ হত্যার কলংক হয়তো বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে বয়ে বেড়াতে হতো না।
সেদিন যারা আমাকে নির্যাতন করেছিলো তাদের অনেকে আবরার হত্যার আসামী হিসেবে দন্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে ফাঁসির অপেক্ষায় আছে বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছে। বাকিরা বুয়েট থেকে পাশ করে বিভিন্ন যায়গায় চাকুরি করলেও আমি মনে করি এদের হাতে বাংলাদেশ নিরাপদ নয়। আমাকে ২০-২৫ জন মিলে পেটালেও সবাইকে আমি চিনতে পারি নি। এদের মধ্যে যাদের আমি চিনতে পারি তারা হলো-
১. হাসান সরওয়ার সৈকত (ME’15)
২. মিনহাজুল ইসলাম (ME’14)
৩. নীলাদ্রি দাস নিলয় (NAME’15)
৪. মেহেদি হাসান (NAME’15)
৫. জিয়াউদ্দিন রুবেল (WRE’14)
৬. আকাশ দেবনাথ (CE’12)
৭. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, NAME’15 (আবরার হত্যাকান্ডে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত)
৮. অর্ণব চক্রবর্তী সৌমিক (ME’15)
৯. রাউফুন রাজন ঝলক (CE’14)
১০. রাফাত ইমতিয়াজ চৌধুরী (EEE’14)
১১. ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না, ME’15 (আবরার হত্যাকান্ডে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত)
১২. মেহেদী হাসান রবিন, ChE’15 (আবরার হত্যাকান্ডে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত)
১৩. মেহেদী হাসান রাসেল, CE’13 (আবরার হত্যাকান্ডে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত)
এই ঘটনার পরে আমার পরিবার একদম ভেঙ্গে পড়ে। আম্মা পাগলপ্রায় হয়ে যান। বুয়েটে চান্স পাওয়ায় আমার গ্রামের সবাই আমাকে নিয়ে গর্ব করতো। আমাকে নিষ্ঠুরভাবে পেটানোর এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে এখনও দেখা হলে তারা আফসোস করে। ফলে বাড়িতেও যাওয়া কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি।
বুয়েট থেকে পাশ করে যাওয়ার পরেও আমি এই ট্রমা থেকে বের হতে পারি নি। আমার পুরো জীবনটাই বদলে গেছে। আমি এখন পর্যন্ত ফেসবুকেও কোন মত প্রকাশ করি না। করতে পারি না। অথচ আমি বুয়েটে এসেছিলাম দেশকে নেতৃত্ব দিবো বলে।
জানি না, যারা আমার জীবনটা এভাবে বাধাগ্রস্ত করলো তাদের মধ্যে কোন অনুশোচনা বা গ্লানি কাজ করে কিনা। আমি বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কাছে শুধু এই অনুরোধ রাখতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বছরের জীবনে ক্ষনিকের স্বস্তি আর রাজনৈতিক পদের লোভে কারো জীবন নষ্ট করো না, কোনো পরিবারের অভিশাপের পাত্র হয়ো না।
আল আরাফাত হোসেন
১৫ ব্যাচ, বস্তু ও ধাতব কৌশল, বুয়েট
ফুটনোট: আরাফাতের উপরে নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা ও নির্যাতনের সময়ে অভিযুক্তদের সম্পৃক্ততা ‘সোচ্চার’ এর পক্ষ থেকে যাচাই করা হয়েছে এবং তখন কিছু মিডিয়াতেও প্রকাশিত হয়েছিলো। তবে নির্যাতনে তাদের সুনির্দিষ্ট ভূমিকা আরাফাতের জবানবন্দী ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে যাচাই করা হয় নি এবং অভিযুক্তদের মন্তব্য নেওয়ার জন্য সোচ্চারের পক্ষ থেকে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয় নি।
সম্ভাব্য শাস্তি: বাংলাদেশ দন্ডবিধি ৩০৭ ধারা অনুযায়ী অপরাধ প্রমানিত হলে নির্যাতনে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা ৩২৫ ধারা অনুযায়ী সর্বনিম্ন সাত বছরের কারাদন্ড ও জরিমানা হতে পারে। কর্তব্যে অবহেলা এবং নির্যাতনে সহায়তার কারণে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বাংলাদেশ দন্ডবিধি ১১৫, ১১৬ এবং ১১৯ ধারা অনুযায়ী বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা হতে পারে।